চার দিন ধরে বেনাপোলে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে পাসপোর্ট যাত্রীরা

গভীর রাতে ও ভোর বেলায় বাস টার্মিনালও রেলস্টেশন এলাকাগুলোতে চুরি ছিনতাইয়ের হয় হরহামেশে। তবে বেনাপোল আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন কেন্দ্রিক পাসপোর্ট যাত্রীকে টার্গেট করে সক্রিয় রয়েছে ছিনতাইকারী ও অজ্ঞান পার্টির চক্রের সদস্যরা। বন্দরের রেলস্টেশন,বাস টার্মিনালও ইমিগ্রেশন এলাকায় পাসপোর্ট যাত্রীদের কাছ থেকে চুরি-ছিনতাইয়ের মত ঘটনা ঘটে অহরহ। হয় মামলাও আটক। তবে কোন ভাবেই বন্ধ হয় না এসব অপরাধ।
তবে গত শুক্রবার (২২শে নভেম্বর) হঠাৎ করে বেনাপোল ইমিগ্রেশনের এলাকা থেকে দূরপাল্লার পরিবহন গুলো ইমিগ্রেশন থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে বেনাপোল স্থানীয় কাগজপুকুর বাস টার্মিনালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মধ্যরাতে ও ভোররাতে বেনাপোলে আসা পাসপোর্ট যাত্রীরা। যাত্রীদের ভোগান্তি ও নিরাপত্তার বিষয়ে চিন্তা করে দূরপাল্লার পরিবহন বাস মালিকরা বেনাপোল ও ঢাকার দূরপাল্লার পরিবহন বাস বন্ধ রাখেন। ফলে গত চার দিন ধরে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ভারত থেকে আসা পাসপোর্ট যাত্রীরা।
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় মা–মেয়েকে হত্যা: কবিরাজ মোবারক গ্রেপ্তার
বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু কোনো সমাধাদন না হওয়ায় বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে ঢাকা, যশোর পরিবহন মালিক সমিতি। অন্যদিকে সোমবার (২৫শে নভেম্বর) থেকে সাতক্ষীরা-নাভারণ-ঢাকা রুটেও বাস চলাচল বন্ধ রাখে বাস মালিক-শ্রমিক নেতারা।
কয়েকজন বাস মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যশোরের বেনাপোল আন্তর্জাতিক বন্দর এলাকায় যানজট নিরসনে পৌর বাস টার্মিনাল ব্যবহারে নির্দেশনা দেয় জেলা প্রশাসন। বাস মালিকরা প্রশসনের নির্দেশানুযায়ী কাগজ পুকুরের স্থায়ী বাস টার্মিনাল ব্যবহারে দিনে বাসগুলো ছাড়ছিল। দূরপাল্লার বাসগুলো যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সুবিধার জন্য রাতের বাসগুলো চেকপোস্ট টার্মিনালে এসে যাত্রী নামিয়ে পৌর টার্মিনালে চলে যাচ্ছিল। এরই মধ্যে ২২শে নভেম্বর রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসের যাত্রীদের কাগজপুকুর পৌর বাস টার্মিনালে নামিয়ে দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে বাস চলাচল বন্ধ রাখে বাস মালিক সমিতির নেতারা।
আরও পড়ুন: নগরকান্দায় বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বৃদ্ধি : আতঙ্কিত জনগণ
ভারত থেকে আসা পাসপোর্ট যাত্রী নিয়ামুল ইসলাম জানান, গতকাল সকালে কলকাতায় চিকিৎসা শেষে বেনাপোলে এসে পৌচ্ছায়। এখানে আসার পর জানতে পারি। ঢাকার সাথে দূরপাল্লার সব ধরনের বাস বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি জানার পর দুপুরে কোন রকম একটি ট্রেনের টিকিট কেটে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। কিন্তু বাস পেলে আমার ট্রেনের জন্য তিন থেকে চার ঘন্টা অপেক্ষা করতে হত না।
বিপ্লব নামে অপার এক যাত্রী বলেন, আমি ভারত থেকে দুপুরে বেনাপোলে পৌছায়। এর পর জানতে পারি ঢাকার সাথে বাস চলা চল বন্ধ আছে। আমার কাছে তেমন কোন টাকা পয়সাও নেই, যে প্রাইভেটকার ভাড়া নিয়ে আমি বাসায় যাব। তাই বাধ্য হয়ে আমি লোকাল বাস যোগে প্রথমে যশোরে যায়। এর পর নড়ােইল হয়ে লোকাল বাসে করে কেটে কেটে ঢাকার উর্দ্দেশ্যে রওনা দেয়।
বেনাপোল পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি বাবলুর রহমান বাবু জানান, জটিলতা সমাধানে রোববার বিকেলে যশোর জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন পরিবহন শ্রমিক নেতারা। কিন্তু বৈঠকে কোনো সমাধান হওয়ায় বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বেনাপোলের দেশ ট্রাভেলসের কর্মকর্তা এ.কে.এম আতিকুজ্জামান সনি বলেন, আমরা বেনাপোলের কাগজপুকুর স্থানীয় টার্মিনালে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। তবে মধ্যরাতে ও ভোররাতে পাসপোর্ট যাত্রীদের নিরাপত্তা জনিত কারণে আমরা আমাদের দূরপাল্লার এসি পরিবহন গুলো বেনাপোল ইমিগ্রেশন চত্বরে কাউন্টারের পৌঁছানোর কথা বলেছিলাম। কিন্তু প্রশাসন সেটা আমলে না নিয়ে মধ্যরাতে ও ভোররাতে কাগজপুকুরে স্থায়ী বাস টার্মিনালে নামিয়ে দেয়াতে যাত্রীরা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে। যে কারণে যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে পরিবহন মালিক সমিতি বেনাপোলের সঙ্গে ঢাকার বাস চলাচল বাস বন্ধ রেখেছে। এ বিষয়ে সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ঢাকার সঙ্গে বেনাপোলের সব ধরনের বাস বন্ধ থাকবে বলে তিনি জানান।
বেনাপোল পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান জানান, প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর কোনও সমঝোতা হয়নি। তারা তাদের সিদ্ধান্তে অনড়। যাত্রীদের নিরাপত্তাসহ হয়রানির হাত থেকে রক্ষার জন্য আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছি। আমাদের পরিবহন বাসগুলো তো কোনও যানজটের সৃষ্টি করে না বা রাস্তায় দাঁড়িয়ে অহেতুক যানজট সৃষ্টি করে না। তিনি দাবি করে প্রশাসন বাস মালিকদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ড. নাজীব হাসান বলেন, পরিবহন মালিক-শ্রমিক কেন বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন তা আমরা জানা নেই। নৌ-পরিবহন উপদেষ্টার নির্দেশেই বাস মালিকদের স্থায়ী টার্মিল ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য গত রোববার দুপুরে যশোরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বেনাপোল বন্দরের যানজট নিরসনে জেলা প্রশাসকের সাথে স্থানীয় সুধীসমাজ এবং পরিবহন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বেনাপোল চেকপোস্ট এবং বেনাপোল বাজার থেকে সব ধরনের পরিমবহণ বাস বা লোকাল বাস বেনাপোল কাগজপুকুর স্থায়ী বাস টার্মিনাল ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এর পর থেকেই পরিবহন বাস মালিক সমিতির পক্ষ ঢাকার সাথে বেনাপোলের সব ধরণের দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখা হয়।